ফাইল ছবি
হাইকোর্ট রায়ে বলেছেন, ফসলি জমিতে পুকুর খননের বিধিনিষেধ আরোপ করে ‘কৃষি জমি সুরক্ষা ও ব্যবহার আইন, ২০১৬’ এর খসড়া আইন প্রণয়ন করা হলেও কোনো এক অজানা কারণে এটি এখনো আলোর মুখ দেখছে না। বাংলাদেশের কৃষি জমি, বনভূমি, টিলা, পাহাড় ইত্যাদি সুরক্ষার জন্য আইনটি দ্রুত জাতীয় সংসদ কর্তৃক পাস হওয়া অতি আবশ্যক।
নওগাঁর মিজানুর রহমানকে পুকুর খনন বন্ধ করতে ভূমি অফিসের নোটিশ অবৈধ ঘোষণার রায়ে বিচারপতি মো. আশরাফুল কামাল ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ পরামর্শ প্রদান করেছেন। কৃষি জমি সুরক্ষা ও ব্যবহার আইন, ২০১৬ অতি দ্রুত আইন আকারে পাস করার জন্য জাতীয় সংসদকে পরামর্শ দিয়ে রায় ঘোষণা করেছেন হাইকোর্ট।
রায়ে আদালত বলেছেন, সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৪২(১) মোতাবেক সম্পত্তি অর্জন, ধারণ, হস্তান্তর এবং যেকোনোভাবে এর বিলি-ব্যবস্থা তথা শ্রেণি পরিবর্তন প্রত্যেক নাগরিকের মৌলিক অধিকার। কেবলমাত্র সংসদ কর্তৃক প্রণীত আইন দ্বারা নাগরিকের উপরোল্লিখিত সম্পত্তি অর্জন, ধারণ, হস্তান্তর এবং যেকোনোভাবে এর বিলি-ব্যবস্থা তথা শ্রেণি পরিবর্তন-এ বিধি নিষেধ তথা আরোপ করা তথা নিয়ন্ত্রণ করা যাবে। এটি সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৪২(১) এর মর্মার্থ। সুতরাং এটি দ্ব্যর্থহীনভাবে বলা যায় যে, বাংলাদেশের প্রত্যেক নাগরিকের সম্পত্তি অর্জন, ধারণ, হস্তান্তর এবং যেকোনোভাবে এর বিলি-ব্যবস্থা তথা শ্রেণি পরিবর্তন সংবিধান প্রদত্ত মৌলিক অধিকার। কোনোভাবেই উক্ত মৌলিক অধিকার তথা সম্পত্তি অর্জন, ধারণ, হস্তান্তর এবং যেকোনোভাবে এর বিলি-ব্যবস্থা তথা শ্রেণি পরিবর্তনে বাধা প্রদান করা যাবে না। নাগরিকের সম্পত্তি অর্জন, ধারণ, হস্তান্তর এবং যেকোনোভাবে এর বিলি- ব্যবস্থা তথা শ্রেণি পরিবর্তনের অধিকারে পরিবর্তন, বিধি-নিষেধ এবং যেকোনো প্রকারের নিয়ন্ত্রণ কেবলমাত্র সংসদ কর্তৃক প্রণীত আইনের মাধ্যমে করতে হবে।
১৫ পৃষ্ঠার রায়ে আদালত কৃষি জমি সুরক্ষা ও ব্যবহার আইন, ২০১৬ অতি দ্রুত আইন আকারে পাস করার জন্য মহান জাতীয় সংসদকে পরামর্শ প্রদান করেছেন।
রিট থেকে জানা যায়, ২০১৯ সালের ৩১ জানুয়ারি নওগাঁর মান্দা উপজেলার কুশুম্বা ইউনিয়ন ভূমি অফিস মো. মিজানুর রহমানকে নোটিশ প্রদান করে তার পুকুর খনন বন্ধ করতে বলেন এবং বালু ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন, ২০১০ মোতাবেক কেন দরখাস্তকারীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে না তা নোটিশ প্রাপ্তির ৩ (তিন) দিনের মধ্যে জবাব দাখিল করার জন্য নির্দেশ প্রদান করেন। এই নোটিশের বিরুদ্ধে মিজানুর রহমান পুকুর খননের অনুমতি চেয়ে ওই বছরের ১৪ ফেব্রুয়ারি জেলা প্রশাসক, নওগাঁ বরাবর দরখাস্ত দাখিল করেন। নওগাঁর জেলা প্রশাসক আবেদনটি নিষ্পত্তি না করায় মিজানুর রহমান হাইকোর্টে রিট করেন। রিটের শুনানি নিয়ে আদালত ২০১৯ সালের ৩০ এপ্রিল পুকুর খনন বন্ধে নোটিশ কেন অবৈধ ও বেআইনি হবে না, এই মর্মে রুল জারি করেন। রুলের চূড়ান্ত শুনানি শেষে হাইকোর্ট ২০২২ সালের ২ জুন পুকুর খনন বন্ধে নোটিশ বেআইনি ও অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেন। সেই রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি আজ প্রকাশ হয়েছে। সূএ:ঢাকা মেইল ডটকম